Posts

Showing posts from 2016

কুলকুলতির ব্রত

Image
মেয়েদের ছোটবেলা মানেই মা বা ঠাকুমার শাড়ি। মাথায় গামছা বা ওড়না দিয়ে লম্বা চুল কিংবা খোঁপা। পুতুলের মা সাজা কিংবা নাচের দিদিমণি। অথবা স্কুলের। আমরাও ছিলাম কয়েকজন। মা, ছোটঠাকুমা বা মেজমার শাড়ি পরে, গামছা দিয়ে চুলের বেণি করে দিব্যি নাচতাম, পুতুল খেলতাম, রেলিংগুলোকে ছাত্র সাজিয়ে বিজ্ঞের মতো পড়া কম-বেশি সবাই বুঝিয়েছি। আমার ঠাকুমা থান পরতো তাই তার শাড়ি পরতে দিতো না। এই শাড়ি পরাটাই ছিলো খুব লোভনীয় ব্যাপার। তার জন্যে অনেকেই সন্ধ্যে দিতে, কুলকুলতির ব্রত করতে ভালোবাসতো। আজকাল শাড়িরা বন্দী ন্যাপথলিনে। ব্রতেরাও বিলীন। শাড়ি পরে পরিপাটি হয়ে সন্ধ্যে দেওয়া, কুলকুলতি করা বেশ পছন্দের কাজ ছিলো। কার্তিক মাসের পয়লা থেকে কুলকুলতির পুজো করতে হতো। টানা একমাস পুজো করে মাসের শেষ দিনে ভোরবেলা জলে ভাসিয়ে চান করতে হতো। একবার করলে পরপর তিনবছর বা পাঁচবছর করতে হতো। পুজোর জন্যে রোজ তিনটে করে প্রদীপ, ফুল, কুলপাতা, দূর্বা লাগতো। একমাস রোজ বিকেলে ঘুরে ঘুরে সবার বাগান  ফুল তোলাটা তখন একটা জরুরি কাজ। এই পুজোয় কুলপাতা অবশ্যই দিতে হতো। তাই বাড়ির কাছের কুলগাছ বলতে তখন চৌধুরীদের কুলগাছ। কেউ কেউ কুলপাতা তুলতে গিয়ে

মহিলা কামরা - ৫

ঠান্ডা পড়েছে। রঙবেরঙের শাল সোয়েটারে মোড়া মহিলা কামরা। উলের লম্বা কুর্তিও দেখা যাচ্ছে দু একটা। এই তো আজ বাদে কাল স্কুল কলেজ হয়ে এক সপ্তাহের জন্যে নিশ্চিন্ত। ট্রেনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গল্পেরা ছুটে চলেছে নৈনিতাল থেকে গ্যাংটক। মাইনাস সতেরো ডিগ্রি থেকে মাইনাস দশ। গল্পেরাও পায় উষ্ণতা। যেমন মোয়ারা পাচ্ছে আদিখ্যেতা। বন্ধ জানলার কাঁচ। তাই ভানুদাকে অনেক ডেকেও সিটি গোল্ডের গয়নার গ্যারান্টি পিরিয়ডটা লিখিয়ে নেওয়া গেলো না। হতাশ গলা — “উফ! আবার সেই কতদিন পরে আসা, মনে থাকবে তো ভানুদার!” এর মধ্যেই একটা বড় সমস্যা! না সমস্যা ঠিক নয়, কারণ ওরাই সমস্যা দূর করে। বলা ভালো একটা সম্পর্কের টানাপোড়েন। দু-তরফের। শহরে। এখন গ্রামেও। আগেও ছিলো, এখনো আছে, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে।  এক দিদিমণি তাঁর সমস্যার কথা শুরু করলেন। বাড়িতে  ছোট বাচ্চা আছে। মূলত তাকে দেখার জন্যেই সবসময়ের জন্যে একজন লোক রেখেছেন। বাড়িতে দিদিমণির মা থাকেন, তিনিই প্রায় সবকিছু করেন। সুবিধার জন্যে একজন লোক রাখা হয়েছে।  দিদিমণি বেশ শান্ত গলায় সমস্যাগুলো বলতে থাকলেন। অন্য এক দিদিমণি বেশ জোর গলায় অনেক পরামর্শ দিতে থাকলেন।  সেই কাজের মেয়

লক্ষ্মী ও সরস্বতী

যাদবপুর স্টেশন। যাবো বারুইপুর। সামনের মহিলা কামরা। অনেক ভিড় দেখে এক অল্প বয়সী সুন্দরী মহিলা জিজ্ঞেস করলেন - “আচ্ছা, এই কামরায় উঠতে পারবো? যা ভিড় দেখছি …”। বললাম, “জানি না। আমিও আজ প্রথম।” একটু এগিয়ে এক মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম - “কোন ট্রেন আসছে?” তিনি উত্তর দিলেন - “লক্ষ্মী।” এ নামটার সঙ্গে আমি পরিচিত। আমার বর যখন ট্রেনে যাতায়াত করে, তখন ফিরে এসে কোনোদিন বলে - আজ লক্ষ্মীতে এলাম, কোনোদিন বা ডায়মণ্ড। প্রথম প্রথম নামগুলো নিয়ে আমরা হাসাহাসি করতাম, এখন সয়ে গেছে। লক্ষ্মী এলো। সবাই ওঠার পর আমিও লক্ষ্মী মেয়ের মতো আস্তে আস্তে উঠলাম। কষ্ট হলো না। উঠেই জিজ্ঞেস করলাম, “বারুইপুর কোনদিকে পড়বে?” তাহলে সেদিকেই দাঁড়াবো। এক মহিলা বললেন “দেরি আছে, ভিতর দিকে চলে যান।” গেট থেকে একটু এগিয়ে ডান দিকের সিট অব্দি গেলাম। সিটের একদম শুরুতে বসা এক মহিলা আর তাকে ধরে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন আর এক মহিলা। দুজনে পরিচিত। দুজনের খুব গল্প। আমি দাঁড়াতেই সিটে বসা মহিলা বললেন, “পিছনে নিজের ঠেল রাখো।” বললাম — “কী?” তিনি আবার একই কথা বলে বুঝিয়ে দিলেন - “চেপে শক্ত হয়ে দাঁড়াও খুব ঠেলাঠেলি হবে, যেন পড়ে যে

ঘেঁটু

মনে পড়ে, রোজ সকালে গাড়ি বারান্দায় পড়তে বসতাম। শীতকাল হলে পূর্বদিক, গরমকালে পশ্চিম। পড়তে বসে পড়ার থেকে মন দিয়ে এদিক সেদিক দেখাটাই ছিলো বেশি দরকারী কাজ। এমনই একটা দরকারী কাজ ছিলো ছোটঠাকুমার ঘেঁটু পুজো দেখা। প্রতি বছর ফাল্গুনের সংক্রান্তির সকালবেলা এই পুজো হতো। পুজোর জন্যে লাগতো মুড়ি ভাজার পুরোনো ঝুলওলা একটা  মাটির খোলা, তেল হলুদে চোবানো ছোট ন্যাকড়া, তিনটে কড়ি, ছোট ছোট তিনটে গোবর দিয়ে পাকানো বল, ঘেঁটু ফুল, সিঁদুর, ধান, দূর্বা। মাটির খোলাটা নিকোনো জায়গায় বসিয়ে দিতো। তার উপর তিনটে গোবরের বল লাগিয়ে, সেই বলগুলো কড়ি, সিঁদুর ঘেঁটু ফুল দিয়ে সাজাতো। খোলার উপরে ন্যাকড়াটা বিছিয়ে দিতো। এই পুজোর জন্যে আলাদা করে পুরোহিত লাগতো না, বিধবা মহিলারাই করতে পারতো। বাড়ির সামনে বা একটু দূরে তিনমাথা, চারমাথার মোড়ে পুজোটা করতে দেখেছি। কারণ পুজোর পরে ছেলেরা মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে খোলাটা ভেঙে দিয়ে দৌড়ে পুকুরের জলে হাত পা ধুয়ে আসতো। সেটা ছোটঠাকুমাই বলে দিতো - "দৌড় দৌড় শিগগিরি পুকুরের জলে হাত পা ধুয়ে আয়, না হলে খোস পাঁজরা হবে।" ছেলেগুলো খোলাটা ভেঙে দিয়ে দৌড়তো। কেউ কেউ এসে বলতো - "ছোটঠাকুমা এই

শারদ শুভেচ্ছা

Image
“ঘুড়ির হাতে বাঁশের লাটাই উড়তে থাকে ছেলে বঁড়শী দিয়ে মানুষ গাঁথে মাছেরা ছিপ ফেলে।” পুজোর সময় কলকাতাকে আমার এমনই মজার দেশ মনে হয়। দু-পা গেলে একটা ঠাকুর, আরো দু-পা গেলে আরো একটা, আরো কিছু পা গেলে অসংখ্য ঠাকুর। এখানে মানুষের সংখ্যা, প্যাণ্ডেলের সংখ্যা, ঠাকুরের সংখ্যা, প্রতিযোগীর সংখ্যা — সব সমান। প্রতিযোগিতার ঘনত্ব আমরা টের পাই টিভি চ্যানেলগুলোর লাফালাফি থেকে, খবরের কাগজের পাতা রাস্তার হোর্ডিং থেকে।   "বাঁশের জালে হাঁসের ঢল, ত্রিকোণ পার্কে দেখবি চল” — এমন সুন্দর সুন্দর ছড়া দিয়ে সব বিজ্ঞাপন।  কাদের প্যান্ডেল সেরা পুরষ্কার পেলো, কাদের প্রতিমা। কাদের একটুর জন্যে পুরষ্কার হাতছাড়া হলো, আর কারাই বা পেলেও পেতে পারতো, সব জানা যায়। পুরষ্কার পেয়ে আনন্দ, হইচই, আবির মাখা নাচ, কারো বা চোখ ছলছল।   গ্রামের পুজোতেও কিন্তু একটা চাপা প্রতিযোগিতা থাকে।  আমার গ্রামের নাম ভবানীপুর। খুব ছোট্ট গ্রাম। আগে লোকসংখ্যাও ছিলো খুব কম। তাই পুজোয় বিশেষ জাঁকজমক করার ক্ষমতা ছিলো না।  উত্তরে আর দক্ষিণে দুটো গ্রাম — পাড়াবাগনান আর রাধাবল্লভপুর। পাড়াবাগনান গ্রামে মাঝে মাঝে পুজো হতো, আবার মাঝে মাঝে হ

পাট ভাঙা আনন্দ

— “পুজোয় কটা হলো? কি কি নিলি?” — “কটা শাড়ি, কটা টপ, কটা জিন্স?” — “সত্যি বলছি পুজোর নাম করে এখনো কিছুই কিনিনি। এমনকি ছেলেকেও কিনে দিই নি।” কারো কারো একমাস আগেই পুজোর শপিং কমপ্লিট। কারো কারো আলাদা করে পুজোর শপিং নেই। সবাই তো এখন সারাবছর ধরে কিছু না কিছু কিনতেই থাকে। একমাস আগেও সেল চলছিলো পুরোদমে। সেল না চললেও দোকানে গিয়ে কোনো কিছু পছন্দ হয়ে গেলেই কিনে ফেলা। দরকার থাক বা না থাক। এখনো আলমারি খুঁড়ে দেখলে একবারও পরা হয়নি এমন অনেক পোষাকই উদ্ধার হবে। আমাদের ছোটবেলায় পুজোর অনেক আগে থেকে জামা-কাপড় কেনার চল ছিলো না। পঞ্চমীর দিন বিকেল অব্দি জানা থাকতো না পুজোয় কটা নতুন জামা হবে, বা আদৌ হবে কিনা। ষষ্ঠী সপ্তমীর আগে তো নয়ই, কখনো কখনো অষ্টমীও গড়িয়ে যেত। তারপর দেখা যেত বাবা দুপুরবেলা বাড়ি ফিরছে সবার জন্যে কিছু না কিছু কিনে নিয়ে। একটু বড় হতে জামার সংখ্যা বাড়লো। জামা পছন্দ করে কেনার স্বাধীনতাও। দাদাদের সঙ্গে দোকানে গিয়ে পছন্দ করে নিতে পারতাম। প্রথম যখন কলকাতায় এলাম, তখন বর্ষার ঠিক পরে পরেই সবার পুজোর বাজার করা দেখে অবাক হয়েছিলাম। দু-আড়াইমাস আগে থেকে প্যাণ্ডেল তৈরির মতোই সা

কাদা

ছোটবেলা থেকেই কাদায় খুব ভয় পেতাম। গা ঘিনঘিন করতো। আজও করে। একটু বৃষ্টি হলেই আর বাড়ি থেকে বেরোতে ইচ্ছে করতো না। পুকুর পাড়ের কাদাকে এড়ানো অসম্ভব বলে। নিতান্ত দরকারে বেরোতে হলে নাকমুখ কুঁচকে কোনোরকমে যেতাম। পাড়ার চন্দনদা আমার যাওয়া দেখে বলতো - "আ মলো অমন গোড়ালি উঁচু করে, আঙুল দিয়ে শহরের মেয়ের মতো হাঁটিস কেনো? কেমন থ্যাপাস থ্যাপাস করে পা ফেলে হাঁটবি তবেই না গ্রামের মেয়ে!" হেসে চলে যেতাম। বৃষ্টি ভালোবাসি খুব। স্বপ্ন ছিলো বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমি স্কুলে যাবো, মাথায় ছাতা কিন্তু পায়ে চটি থাকতে হবে। পায়ে কাদা লাগা চলবে না। সম্ভব হয়নি। এখন লাল মোরাম আর কংক্রিটে মোড়া রাস্তা, একটু ঘুরপথে গিয়ে পুকুর পাড়ের কাদাও এড়ানো যায়। আমি স্কুলে পড়ি না। এখন বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে জুতো পায়ে কলেজ যেতে পারি তবুও 'কাদা' ছিটকে গায়ে আসে। কাদার ধর্মই তাই। পাত্তা দিই না। ছোটবেলায় কাদা দিয়ে বানানো পুতুল পাল্কি নিয়ে অনেক খেলেছি। একটাও নিজে বানাতাম না। মাখা আটা দিয়ে অনেক পুতুল বানিয়েছি। কিন্তু সেটা যত্ন করে ব্যাটারির বাক্সে ভরে শাড়ি-গয়না পরিয়ে রাখতে পারতাম না। ভেঙে যেতো। তাই কাদা দিয়ে যারা বানা

মহিলা কামরা - ৪

ফেরার সময় দেখি মহিলা কামরার ছবিটা বেশ অন্যরকম থাকে। এমনকি দুপুরের ট্রেন একরকম হয়, বিকেলের ট্রেন আর একরকম। দুপুরের ট্রেন সাধারণত খুব ফাঁকা হয়। সবাই মোটামুটি হাত পা ছড়িয়ে, অন্য সিটে দু-পা তুলে যায়, কেউবা শুয়েও। বিশেষ করে যারা ঠিকে কাজ করে বা বাজার থেকে ফেরে তারা। কোনো কোনো মাসি তো বাজার ফেরত বাকি সবজিগুলো গেটের ধারে ছড়িয়ে বিক্রি করতে বসে যায়। শুকনো করলা, পটল, বীনস, কাঁচালঙ্কা, শাকও থাকে। তখন তারা পারলে মোটামুটি সবগুলোই দশ টাকাতে দিয়ে দেয়। মোসাম্বিওলা পিন্টু তখন গেটের মুখে ফাঁকা জায়গায় বসে তার লেবুর বস্তা থেকে লেবুগুলো একটা একটা করে নিয়ে গামছা দিয়ে মুছে মুছে ঝুড়িতে রাখে। এইসময় বাদামচাক, ওয়াফেল, টক-ঝাল, লেবু, আদা, আনারস লজেন্সওলা সবাইকেই ট্রেনে দেখি। কিন্তু এরা সবাই অন্য, দু - চারজন বাদ দিলে আর কাউকে সকালে যাবার ট্রেনে দেখা যায় না।  একজন ফেরিওলা আছে উঠেই প্রচন্ড নাকি সুরে শুরু করে দেয় — “এই কাজু না, কিসমি না, আমসত্ব”। তার ঝুড়িতে থাকে ছোট ছোট কাজু, কিসমিস, আর আমসত্বের প্যাকেট। পাঁচ আর দশ টাকার। আর একদম ছোট ছোট আমসত্বের পুরিয়া এক টাকা করে। কিন্তু সে কেনো যে — “কাজু না, কিসম

অন্ধকারের উৎস হতে

আজ আমার কলেজে প্রথম দিন। নতুন জায়গা। স্যার ম্যামরা সবাই নতুন। ক্লাসেও সবাই নতুন। মনের মধ্যে এক নতুন স্বপ্ন, উত্তেজনা। একটু একটু নার্ভাস লাগছে। তবুও মন বলছে এগিয়ে যাও, তুমি পারবে।  এক সপ্তাহ আগেও ভাবিনি আমার জীবনে সত্যিই এই দিনটা আসবে। আমার জীবনটা ঠিক যেন একটা গল্পের মতো।  —— আমার নাম লক্ষ্মীমণি সাঁতরা। বয়েস আঠেরো। কদিন আগেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছি। ফার্স্ট ডিভিশন। রেজাল্ট নিয়ে সেদিন নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরেছিলাম। খুশিতে টগবগ করতে করতে এসে মাকে বললাম - “মা আমি ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছি।” মাও খুশি হয়েছিলো, হয়তো প্রকাশ করতে পারেনি। ছোট বোন দৌড়ে এসে বলেছিলো - “দিদি তুই ফাস ডিবিশন পেয়েছিস? কি মজা! কি মজা!” সে এটার মানে কিছু বুঝেছিলো বলে মনে হয় না, তবুও আমার থেকে কম নাচেনি। মেজো বোন মুচকি হেসেছিলো। তখন বুঝিনি কেন।  পাড়ার যারা কেউ কিছুই বোঝে না, তারাও আমাকে নিয়ে অনেক আনন্দ করেছিলো। লকু আমাদের কত ভালো মেয়ে। এই তো কি ভালো রেজাল করলো। আমাদের সাঁতরা পরিবারে তুই তো পোথম এমন রেজাল করলি মা। এর আগে আমাদের কেউ এতোদূর পড়েইনি। আমিও তাদের বলেছিলাম - “দেখবে আমি আরো ভালো করবো, আমি কলেজে পড়বো,

মহিলা কামরা - ৩

বহুদিন পরে সেদিন ময়ূরীকে দেখলাম। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে কোনো একটা বিষয় নিয়ে অন্য এক দিদিমণিকে খুব উপদেশ দিচ্ছিলো। পাশে আরো কয়েকজন দিদিমণি তাঁদের স্কুলেও “ওই একই সমস্যা” সেটা বোঝাতে চাইছিলো। আমি একটু দূরে ছিলাম, তবুও বারবার  ময়ূরীর কথাই কানে আসছিলো। সে বলছিলো — “আরে তুমি এই বিষয়ে কম্পিটেন্ট। বলছি না তুমি খুবই কম্পিটেন্ট তাই HOD তোমাকে এটা নিয়ে কিছু বলবেন না।  আরে আমি বলছি তো, তুমি দেখো।” ওই একই কথা ঘুরে ফিরে নানান টোনে বলছিলো আর হেডফোন ঠিক করছিলো। তার হেডফোন এখন লাল থেকে সাদা হয়েছে। অন্য এক দিদিমণির মুখনাড়াটুকুই দেখতে পাচ্ছিলাম, কথা কিছু বুঝতে পারিনি। ট্রেন এসে গেলো। ময়ূরী ট্রেনে উঠে সিট পেয়েই আবার হেডফোন গুছিয়ে বসলো। এর মধ্যেই স্বপনদা সুর করে — “বাসন মাজা স্কচ ব্রাইটটা পাবেন, চুলের ক্লিপ” — বলতে বলতে একটু দূরে চলে গেছে। ময়ূরী হঠাৎ চেঁচাতে শুরু করলো — “কাপড় কাচা ক্লিপ আছে? কাপড় কাচা?” সবাই হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে। স্বপনদাও তাই। তখন ময়ূরী চকিতে সম্বিত ফিরে বললো — “আরে ধুর্-র কি যে সব বলছি না..  ওই কাপড় মেলা, কাপড় আটকানোর ক্লিপের কথা বলছি।” স্বপনদা - “আছে”, বলে তা