Posts

Showing posts from February, 2017

গব্বর সিং

টাকারা বদলায় হাত গদিরা মন্ত্রী। ঘুড়িরা ছেঁড়ে সুতো তুমি আমি কিন্তু সেই লাটাই। চুরি কে না করে? ছোটবেলায় আমিও করেছি। আমার মা’ও করেছে। দুপুরবেলার নিস্তব্ধতায় বড় জেঠুর নাক ডাকাকে বাঁচিয়ে রেখে আমি আর আমার দলবল তেঁতুল চুরি করতাম। আমিই ছিলাম দলের হেড। বাকিরা আমার থেকে ছোটো। মজন্তালি সরকারকে মনে আছে? সে বাঘিনী আর তার বাচ্চাদের ঝাঁপে পাঠিয়ে নিজে খাপে লুকিয়ে থাকতো। গল্পটা না জানা থাকলে পড়ে নিও, না পড়লে খুব মিস করবে। মজন্তালি সরকারের মতো আমরাও খাপে আর ঝাঁপে থেকেই চুরিটা করতাম। পাছে জেঠুর ঘুম ভেঙে যায়, তাই পুরো নিঃশব্দে কাজ। আমি কখনো ঝাঁপে থাকতাম না, ওই ঝাঁপাঝাঁপির ভয়ে খাপেই থাকতাম। নির্দেশ দিতাম চৌকির নিচের কোন মাটির হাঁড়িটা থেকে তেঁতুলটা নিতে হবে। যে তেঁতুল যত পুরোনো সে তেঁতুল তত কালো আর স্বাদেও অতুলনীয়। যারা এই স্বাদের মধ্যে দিয়ে না গেছে, তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আমাদের বাড়ির মা, জেঠিমারা সবাই, আমাদের ছোটদের ভয়ে খাটের তলায় তেঁতুল লুকিয়েই রাখতো। কিন্তু তাতে খুব একটা সুবিধা করতে পারতো না। রোজই তেঁতুল, নুন, সরষের তেল, কাঁচালঙ্কা চুরি যেতো। আমাদের গাছের কাগজি

উত্তরের দরজা

Image
লেখাটা আমার কাছে এখন দিন আনা দিন খাওয়ার মতো হয়ে গেছে। তাই বেরোতে না পারলে ভালো লাগে না। না বেরোলে আমি মানুষের গল্প শুনতে পাই না। তাদের সুখ দুঃখের কথার সাক্ষী হতে পারি না। এমনকি আমার “মহিলা কামরা”ও ভরে ওঠে না। অচেনা কারোর সঙ্গে গল্প করি না ঠিকই, কিন্তু স্টেশনে যখন দাঁড়িয়ে থাকি তারা নিশ্চিন্তে আমার দিকে তাকিয়ে অনর্গল কথা বলে যায়। আমি ঘাড় নাড়তে থাকি। গল্প চলে। স্টেশনে এক মহিলা পাঁপড় বেচেন। আমি গিয়ে তার পাশে রাখা কাঠের টেবিলে আমার ভারী ব্যাগটা রেখে দিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকি। সে নিশ্চিন্তে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গল্প বলে যায়। আর মাঝে মাঝে লোক দেখলে হেঁকে ওঠে “দশ টাকা পাঁচ টাকা, দশ টাকা পাঁচ টাকা।” ফাঁকা না হওয়া অব্দি এই চলে। তার কাছে বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন শেপের পাঁপড় থাকে। কোনোটা মুসুর ডালের মতো দেখতে, কোনোটা গোল গোল করে কাটা ঢ্যাঁড়সের মতো সবুজ রঙের, কোনোটা বা পাইপের মতো। একদিন শুনলাম সে বাংলা সিরিয়ালের নাম ধরে ধরে পাঁপড়ের নাম বলে যাচ্ছে। “বোঝে না সে বোঝে না’র পাখি পাঁপড় আছে, তোমায় আমায় মিলে, বধূ বরণ”, এরকম আরো কয়েকটা। সিরিয়াল দেখি না বলে সব নাম বলতে পারলাম না। সব ধরনের পাঁপড় পাব

এই একটু আশেপাশে

ডাক্তারখানা গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি চারজন ইতিমধ্যে বসে, আমি পাঁচ। ডাক্তারবাবু ভিতরে একজনকে দেখছেন। আমি যে চেয়ারে বসলাম তার ডানপাশে বছর ষাটের এক মহিলা, তাঁর ঠিক উল্টোদিকে বছর পঞ্চাশের আর এক। দুজনেই বেশ সুন্দর দেখতে। তাঁদের গল্পের বিষয় - এখন ছেলেমেয়েরা কি করে, বাড়িতে টাকা পয়সা দেয় কিনা… ইত্যাদি ইত্যাদি। বছর পঞ্চাশের যিনি তিনি বললেন - “আমাদের টাকার তো দরকার নেই, তারা নিজেরা যা আয় করে তারা তাদের মতোই খরচ করে, তাদের মতোই থাকে।” তাতে বছর ষাটের মহিলার conclusion - “আমরা বাবা এরম ভাবতে পারি না! আজকালকার ছেলেমেয়েরা সত্যি!! হতাশ হয়ে গুছিয়ে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন।” আমি ফেসবুক খুলে এটা সেটা দেখছিলাম। খেয়াল করলাম, উনি মন দিয়ে দেখছেন। একটু পরে তাকিয়ে দেখি উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। তার একটু পরে উল্টোদিকের মহিলা উঠে এসে আমার বাঁ পাশে বসলেন। আমি নিজের মনে ফেসবুক স্ক্রল করেই চলেছি। উনি হঠাৎ বললেন - “দেখি, এই কানেরদুল আর হারটা একটু দেখে নি।” আমি থেমে সবকটা একটা একটা করে দেখালাম। তারপর অন্য দুটো সাইটের আরো কিছু কানের দুল আর শাড়ির ছবি দেখালাম। উনি খুব মন দিয়ে দেখে বললেন,

সরস্বতী বিদ্যেবতী

দুজন কলেজ ছাত্রী। স্টেশনে হঠাৎ দেখা। একজন অন্যদিক থেকে হাত বাড়িয়ে দৌড়ে এলো। “ইইইই …” করে আনন্দে আওয়াজ করেই, “কি রে তুই?” -- “হ্যাঁ এই পড়তে যাবো।” -- “ও। তারপর কি খবর বল?” -- “কি আর এই তো চলছে। বলছি তুই সরস্বতী পুজোয় বেরোচ্ছিস তো?” যে মেয়েটি দৌড়ে এলো সে বললো, “না রে, এবারে মনে হয় হবে না! কি যে করি। ও তো থাকবে না!” -- “কোথায় যাবে?” -- “কাশ্মীর।” -- “ওঃ তুই তাহলে আমাদের সঙ্গে বেরোতে পারিস তো? চলনা চলনা আমাদের একটা গ্রুপ আছে। আমরা সবাই একসঙ্গে বেরোবো। তুই তাহলে যোগ দে, তোর যদি ও না থাকে। এক কাজ কর আমি তোকে আমাদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে তাতে ঢুকিয়ে নেবো। তাতে জানিয়ে দেবো।” -- “ও ওই গ্রুপটায় তো? যাতে সৌম, সৌভিক ওরা আছে?” -- “হ্যাঁ হ্যাঁ ওটায়।” -- “সৌভিক আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো যাবি? আমি বলেছি ঠিক নেই।” -- “আরে সেটাই তো এখনো টিকিটি কাটা হয়নি, এবং কবে যেতে হবে জানেও না কিন্তু ওইসময়ই যেতে হবে।” -- “ঠিক আছে তুই এক কাজ করিস ও গেলে আমাদের সঙ্গেই বেরোস, আর ও থাকলে তো প্রশ্নই নেই। এই ট্রেন আসছে। নে টাটা। বাই। হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়ে দিস। কথা হবে ওখানে।