Posts

Showing posts from March, 2017

কালো

Image
ছোটবেলায় একা বাড়ির বাইরে বেরোতে গেলে সবাই ছেলেধরার ভয় দেখাতো। আমাদের পাড়ার এক দাদাকে নাম ধরেই বলা হতো “ও” কিন্তু  ছেলেধরা। তার গায়ের রঙ কালো। কালো চাপ দাড়ি। লুঙ্গির সঙ্গে একটা ফতুয়া পরে আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বস্তা হাতে যেতো। ওই বস্তায় করে সে “গুল” দেওয়ার জন্যে কয়লার গুঁড়ো নিয়ে যেতো, ফলে কয়লার রঙ তার গায়ের রঙকে আরো উন্নত করে দিতো। তখন থেকেই আমি কালো লোক দেখলে খুব ভয় পেতাম। ছোটবেলা থেকে শাক, চা এইসব খাওয়া শুরুই করিনি। ভাবতাম ওগুলো খেলেই আমি কালো হয়ে যাবো। পাড়ার এক জেঠু এটা জানতে পেরে আমার উপর উলটো চাপ দিয়ে আমাকে “কালো মেয়ে” বানিয়ে দিয়েছিলো। জেঠুর নাম কৃষ্ণকান্ত মাইতি। আমরা বলতাম ‘কেষ্ট জেঠু’। জেঠুর নামটা মনে হয় গায়ের রঙকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্যেই রাখা হয়েছিলো। সেই জেঠু আমাকে দেখলেই - ‘কালো মেয়ে’ বলে ডাকতো। এসে আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে মা’কে বলতো - “দেখলে ছোট বউমা, তোমার কালো মেয়েটা আমাকে ছুঁয়ে পুরো কালো করে দিলো। এ হে হে! ছ্যা ছ্যা ছ্যা! আমার হাতের এই জায়গাটা পুরো কালো করে দিলে গা!” আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। মা হাসতো। আমার পিসি আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতো। বলতো, “

কুটুমবাড়ি

সকালে আমরা তিনজনে গিয়েছিলাম আমাদের বিরাটির বাড়ি, আমার শ্বশুরমশাই-শাশুড়িমা’র কাছে। ছেলে বহুদিন পর দাদান বৌঠানের বাড়ি গিয়ে আর কিছুতেই ফিরতে চাইলো না। আমাদের বলে দিলো তোমরা চলে যাও। অনেক বোঝালাম, আমি বাড়ি ফিরে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। মুখ ভার করে চুপ করে থাকলো। তার ইচ্ছে দুদিন সেখানে থেকে পরশু বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় তাকে নিয়ে ফিরুক। শেষে আমি বললাম, তাহলে আজ দাদান বৌঠান আমাদের বাড়ি যাক, কাল চলে আসবে। তাই শুনে মুখে একটু হাসি ফুটলো। কিন্তু শুরু হলো দরকষাকষি । দাদান বললো আজ যাই কাল সকালে উঠেই চলে আসবো। নাতির মিহি সুরে বায়না স-কা-লেএএ নয়। সন্ধ্যেবেলা তোমরা আসবে। দর কষে রফা হলো কাল দুপুরে ভাত খাওয়ার পর ও যখন ঘুমোবে তখন তাঁরা যাবেন। এমন হতেই পারে যে তখন আবার ওনাদের সঙ্গে ও যেতে চাইবে। আজ আমার মনে হলো - আমাদের পুতুলখেলার সংসারটা ঠিক এইরকম ছিলো। আমরা পুতুল সাজিয়ে কুটুমবাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনতে না আনতেই আবার অন্য পুতুলের বাড়ি যাওয়ার সময় হয়ে যেতো। এভারেডি ব্যাটারির বাক্সে বন্দি পুতুলের সংসার। আমরা অভিভাবক। পরপর তিনটে পরিবার বাক্স সাজিয়ে গাড়িবারান্দায় শুরু হতো পুতুলখেলা। খেলার নিয়মে নতুনত্ব ক

রঙ যেন মোর মর্মে লাগে

ছোটবেলায় রঙ খেলার দিনটা কবে আসবে তাই নিয়ে যতটা উৎসাহ থাকতো, খেলা নিয়ে ঠিক ততটা নয়। কোনোদিনই রঙ খেলিনি। ছুটির দিন। সকালবেলা উঠে ব্রাশ করে, কিছু একটা খেয়ে, আমি আর আমার সঙ্গীরা দোতলায় দৌড়। তারপর কেউ আমাদের ডেকে ডেকেও নামাতে পারতো না। কোনো এক ফাঁকে এসে আর একবার একটু খেয়ে যাওয়া। এই লুকোচুরিটাতে বেশ আনন্দ ছিলো। মাঝের ঘরে খিল দিয়ে বসে, জানলা দিয়ে শুধু দেখা - কাদের দল রঙ খেলতে এলো, কতজনকে মাখাতে পারলো। কারা না মাখার ভয়ে চিৎকার করে দৌড় দি য়ে ঘরে খিল দিলো। চিৎকারটা শুনলে বেশি আনন্দ হতো। রঙের হাত থেকে বাঁচার চিৎকার তাই কখনো ভয়ঙ্কর মনে হত না। ওইদিনটায় মা, কাকিমা, জেঠিমা, বৌদিরা কারো হাত থেকেই রেহাই পেতো না। কারণ গ্রামের খোলা-মেলা ফাঁকা জায়গার মধ্যেই সব কাজ। হয়তো কেউ গোয়াল ঘরে গেছে, কেউবা দোকান বা পুকুরঘাটে বসে বাসন মাজা। একদল কচিকাঁচা সাতসকালে উঠে বালতিতে রঙ গুলে পিচকারি নিয়ে যাকে দেখতে পেতো তার গায়েই রঙ দিয়ে দিতো। শহরের মতো চেনা-অচেনার বাছবিচার ওখানে নেই। যে যাকে দেখতে পায় ফিচিস করে রঙ ছুঁড়ে দেয়। আমাদের জানলার দিকেও পিচকারি তাক করতো, তাতে আমাদের গায়ে পৌঁছনোর আগে মাঝ পথেই রঙ নষ্ট হতো। এ

বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি

স্টেশনের বেঞ্চটা ভেজা দেখে বসবো কিনা বুঝতে পারছিলাম না। ওই বেঞ্চে বসে থাকা এক ভদ্রলোক বললেন, "বসো ভেজা নেই।"   জানতে চাইলাম সত্যি ভেজা নেই? বললেন, "না।" বসে গেলাম। উনি বললেন, "ভালো করে উঠে চেপে বসতে পারো। জল, নোংরা কিছুই নেই।" বললাম, ঠিক আছে। বসেই একটু গুছিয়ে উদাসীন হলাম। প্রশ্ন শুরু করলেন - -- “তোমার স্কুলে কবে ছুটি পড়বে?” -- স্কুল নয় কলেজ। -- “ও, কলেজে পড়ো?” -- পড়ি না, পড়াই। -- “ও আচ্ছা! কোন কলেজ?” -- ওই দিকেই একটা কলেজ। -- “বুঝেছি।” বলেই কলেজের নাম বললেন। -- হুম! আজ আকাশের ঘন মেঘের সঙ্গে আমার খুব উদাসীন থাকতে ইচ্ছে করছিলো। একটুও কথা বলতে বা শুনতে ভালো লাগছিলো না। উনি এক মিনিট চুপ থেকেই আবার একতরফা শুরু করলেন - “ট্রেনটার টাইম এগারোটা সাত, কিন্তু রাইট টাইমে কখনো আসে না। দশ পনেরো মিনিট দেরি করেই থাকে।” তাঁকে থামানোর জন্যে হাসিমুখে বললাম - আমি এই দিকের ট্রেনে যাতায়াত করি, জানি। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবার - “আসলে তোমাদের কলেজটা তৈরি করেছেন যিনি সেই ভদ্রলোকের কেউ ছিলো না। অনেক টাকা পয়সা ছিলো। তাই তিনি বলেছিলেন, ‘এমন একটা কাজ করবো যে

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর

মাটির তিনতলা বাড়ি। তিন কামরা করে মোট ন-কামরা। রান্নাঘর, উঠোনসহ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। একদিকে গুলপেরেক লাগানো খিড়কি দরজা, অন্যদিকে উত্তরের বড় দরজা। শহরের লোক শুনলেই চমকে উঠতো, সেকি? তিনতলা? মাটির? এমন হয়? বিশ্বাসই করতো না। দাদাভাই তো খুব কৌতূহলী ছিল - আমরা বারান্দা দিয়ে হাঁটতে পারতাম কিনা তাই নিয়ে। বলতাম, আমরা সবাই রীতিমত দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি করে খেলতাম। এখনো বাড়ির বাচ্চারা তাই করে। শুনে সে বলেছিলো তাহলে একবার আমি তোদের বাড়ি যাবো গিয়ে বারান্দায় খুব লাফাবো। সেই পরীক্ষা সে এখনো করে উঠতে পারেনি। তিনতলার মাথায় আগে ছিলো খড়ের ছাউনি। গরমকাল এবং শীতকাল, দুই সময়েই খুব আরামদায়ক। আমার দেখা সেটা অ্যাজবেসটস হলো। আর ঘরে আলো ঢোকার জন্যে আর একটা কি মেটেরিয়াল দিলো, নামটা জানি না তবে তা ভেদ করে আলো আসে খুব সুন্দর। দিনেরবেলাতেই টিউব লাইটের আলোর মতো দেখায়। গরম বাড়লো। দোতলায় বরাবরি টিনের চাল ছিলো, তাই গরমকালের দুপুরে আমরা কেউ ওপরে থাকতাম না। নিচেরতলার আরাম কেউ ছাড়তে চাইতো না। তবে তিনতলায় খড় থাকার সময় দোতলার ঘাম নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতো না। পুরো বারান্দা থেকে গাড়িবারান্দা সবই রেলিং দিয়ে ঘেরা। গরমকালে আমরা