Posts

Showing posts from July, 2017

মহিলা কামরা ৭

মুকুটের পালক রাজকুমারদা পেয়ারা নিয়ে এসে চুপ থাকতে পারে না। সব দিদিমণিদের মনে করিয়ে দেয় সে হাজির। এক দিদিমণিকে বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকলো, দিদিমণি আজ পেয়ারা দেবো না? দিদিমণি বাধ্য হয়ে তাঁর প্রবলেম বলতে শুরু করলেন, “আরে নিতেই তো পারি। মুশকিল কি জানো, আমি খেতে ভুলে যাই। ব্যাগে পড়ে থেকে পেকেপুকে একাকার হয়ে যায়, যখন ব্যাগ থেকে পেয়ারা বেরোয় তখন দেখি পচা গন্ধ হয়ে গেছে। এক যদি টিফিন খাওয়ার পরে পরেই খাই তাহলে হয়, যদি পরে খাবো বলে রেখে দি তাহলেই গ্যালো। ঠিক আছে তাও দাও ডাঁসা দেখে একটা।” রাজকুমার ডাঁসা দেখে একটা দিয়ে দিলো। দিদিমণির পাশে আর এক দিদিমণি বসে ছিলেন। উনি বলতে লাগলেন, “তুমি ডাঁসা পছন্দ করো? আমার মেয়েও তাই।” -- “আমার মেয়েরা আবার ডাঁসা একদম পছন্দ করে না, একটু পাকা পাকা হলে তাদের খুব ভালো। বড় মেয়ে তো আবার মাঝখান থেকে বীজগুলো খেয়ে খোলাটা ফেলে রাখে।” -- “আমার মেয়ের বাব্বা! একচুল এদিক ওদিক হওয়া চলবে না। না পাকা, না খুব কাঁচা। ওই একেবারে ডাঁসা যাকে বলে সেটাই চাই।” -- “তোমার মেয়ে এখন কি করে যেন?” -- “সে তো মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেছে।” -- “ও তাই? সেটা জানতাম না তো!” -- “হ্যাঁ,

জীবনের ওঠাপড়া

মঙ্গলবার দুপুর। সময় দুটো পঞ্চাশ।  আমি আর আমার এক কলিগ গল্পে মত্ত ছিলাম। তখন আর এক কলিগ হুড়মুড় করে কাঁধে ব্যাগ নিতে নিতে বললো, “কি গো তোমরা বাড়ি যাবে না?” আমি বললাম, হ্যাঁ আমি যাবো, তুই একটু দাঁড়া। সে বললো, “না, তোমার এখনো সই- ফই কিছুই হয়নি, আমি দাঁড়াবো না। এখনই দৌড়ে দৌড়ে যেতে হবে, নাহলে ট্রেন মিস হয়ে যাবে।”   ট্রেন তিনটে নয়ে, আসে আর একটু দেরিতে। স্টেশন যেতে রিক্সায় লাগে সাত মিনিট মতো। আমি কথায় কথায় সময়টা বুঝতে পারিনি। যার সঙ্গে গল্প করছিলাম, ভাবছিলাম সেও ওই ট্রেন ধরবে, তাই আমি তার উপর ভরসা করেছিলাম। জানা গেলো সে পরের ট্রেন ধরবে। সেই কলিগ চলে গেলো। আর এক দিদিও বেরোচ্ছিলো। বললো, “তুই তাড়াতাড়ি সই করে চলে আয় পেয়ে যাবি, আমি বেরোলাম।” বলে সেও চলে  গেলো। আমি সব গুছিয়ে তড়িঘড়ি  রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে অটো, রিক্সা কিছুই পেলাম না। কিছুক্ষণ পর এক রিক্সাওলা এলো। -- বললাম, যাবে? -- কোথায়? -- স্টেশন। কোনো উত্তর দিলো না। জানতে চাইলাম কত নেবে? -- কুড়ি টাকা দেবেন। -- কুড়ি কেন? একা গেলে পনেরো তো? -- না, কুড়ি দিতে হবে। তুমি জানো না, রিক্সা স্ট্যান্ড অব্দ

গাছও কথা বলে

১ স্টেট ব্যাংকে ঢোকার জন্যে ফুটপাথে লাইন। আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। ফুটপাথের দোকানগুলো তখনো সেজে ওঠেনি। ঝাঁপ খুলে কর্মচারী, মালিক ঘুম চোখে এক এক করে মাল নামিয়ে সাজানোর চেষ্টা করছে। আমি যে দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে মোবাইলের ব্যাক কভার, হেডফোন, স্পিকার এইসব বিক্রি হয়। এরমধ্যেই মালিক এসে তার কর্মচারীকে খুব ধমক দিতে শুরু করলেন। “কার থেকে কটা মাল এনেছিস মনে নেই? তোকে কতবার বলেছি লিখে রাখবি। কানে ঢোকে না,না? তুই তো জানিস যেগুলো বিক্রি হয় না তাকে সেগুলো ফেরত দিতে হবে। এখন কোনো মালের লেবেল নেই, কার মাল জানা নেই কি করে ফেরত দেবো?”   কর্মচারী অল্প বয়সী একটা ছেলে। মাথার সামনে বড় বড় লটকা চুল। চোখে এসে পড়ছে, আর মেয়েদের মতো ঘাড় ঝাঁকিয়ে চোখ থেকে চুল সরিয়ে দিচ্ছে। চুলে রঙ করা। খুব মিষ্টি মিষ্টি করে হেসে মালিককে বললো, “ভিড় ছিলো খুব।” মালিক তো রেগে আগুন - “ভিড় ছিলো মানে? ভিড় ছিলো বলে তুই ভুলভাল করবি? কিচ্ছু লিখে রাখবি না? ভিড় থাক। কিছু কাস্টমার ফিরে যায় যাক, তবুও তুই কাজ গুছিয়ে একটাকে ছেড়ে তবে অন্য কাস্টমার ধরবি। আর শোন এবার থেকে সব লিখে রাখবি। কার থেকে কটা মাল আনলি, কটা বিক্রি হলো।” ব

দুঃস্বপ্ন

ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফেরার সময় ফকির পাড়া দিয়ে ফিরতাম। খুব জল তেষ্টা পেলে নৌসেরদাদের বাড়িতে গিয়ে বলতাম - বৌদি জল দাও। বৌদি জলের সঙ্গে বাতাসাও দিতো। সেই বাতাসাগুলো ওদের মসজিদের মানত মেটানোর বাতাসা। মানতটা হিন্দু-মুসলিম সবাই করতে পারে। মসজিদটাকে বলাও হয় শাহ-কামালের মন্দির। নৌসেরদার দিদিকে আমরা আশলে-দি বলি। সে আমাদের বাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই বেড়াতে আসতো। তখনকার দিনে গ্রামের যারা হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে যেতো না, বাড়িতে বাচ্চা প্রসব করানোর কাজটা আশলেদিই করতো। আশলেদির এক বৌমার মেয়ে নেই। সেই বৌমা আমাকে বলতো - তুই আমার মেয়ে। আমাকে মা বলে ডাকবি। মেয়ে বলে তাদের প্রতিটা পরবের সিমাই আর নানান খাবার আমার জন্যে রেখে দিতো। আমি স্কুল থেকে ফেরার পথে খেয়ে আসতাম। স্কুলে আমার প্রিয় বন্ধু ছিলো হাসিবা। কতবার তাদের বাড়ি যেতাম হিসেব দিতে পারবো না। বিশেষ করে পেয়ারার দিনগুলোতে। তাদের বাড়ির উঠোন জুড়ে পেয়ারা গাছ। কোন গাছের পেয়ারা কেমন সেটা আমি দীপিকা, দোলা, রিক্তাদি সবাই জানতাম। তাদের কলকাতায় বেকারি বিস্কুটের কারখানা ছিলো। কলকাতা থেকে আনা অনেক জিনিসও খেতে পেতাম হাসিবার থেকে। সাকিনা, হাসিনা, আকতারাও যেতে