Posts

Showing posts from 2017

মামাবাড়ি

রুহান বহুদিন পর মামাবাড়ি আসবে, তার উৎসাহই আলাদা। তাই আসার আগে ও পরে কদিন থাকা, এখানে কী কী করা, সেই নিয়ে অনেক দরকষাকষি হয়েছে। সেই সুযোগে আমিও ওর কিছু মতামত নেওয়ার চেষ্টা করেছি। ---- আসার আগেরদিন রুহানকে বললাম, “বাবান মামাবাড়িতে তোমার ছোট ছোট দুজন দিদি আছে, তাদের জন্যে কি নিয়ে যাবো?” সে ভাবনা চিন্তা করে বললো, “মা প্রত্যেকবার তো চকলেট, মিষ্টি এইসব নিয়ে যাও, এবারে নতুন কিছু একটু নিয়ে চলো।” বললাম, “নতুন কি কি বলো?” বললো, “এই যেমন হেয়ার ব্যান্ড, ক্লিপ এইসব।” বললাম, “এখন আর সেসব কোথায় পাবো? এই সন্ধ্যেবেলা কোথায় কিনি বলো?” তখন বললো, “তাহলে বরং ওই হার, চুড়ি, কানের দুল নিয়ে চলো।” “সেসবই বা কোথায় কিনবো এখন? সামনে কোনো দোকান নেই।”   “কেন মা, সেনকো গোল্ড তো আছে, ওখান থেকে কেনা যাবে না?” ---- এবারে আমরা একটা অন্য রাস্তা দিয়ে এসেছি।  গ্রামের মধ্যে দিয়ে আসার সময় এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে রাস্তার ম্যাপ দেখতে হয়েছে। তখন রুহান গাড়ির সামনে থেকে উপর দিকে তাকিয়ে বললো, “মা দ্যাখো কি সুন্দর কর্ন, ভুট্টা এইসব দিয়ে সাজিয়েছে।” আম

যারা পাল্টায়নি

আগের মতো খুব ঘন ঘন আর গ্রামে আসা হয়না। যখন আসি, অনেক কিছুই অচেনা লাগে। কতো নতুন নতুন ঘরবাড়ি, দোকান গজিয়ে উঠেছে। বদলে গেছে চারপাশ। ভ্রু কুঁচকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর অভ্যস্ত হই আমার পুরোনো জায়গাটার সঙ্গে। ভ্রু কুঁচকাতে হয়না শুধু পুরোনো মানুষগুলোর সঙ্গে মেশার সময়। সকালে বেরোনোর সময় গয়নার বাক্স খুলে বসেও, আমার মতো করে সাত পাঁচ ভেবে নিয়ে একটা গয়নাও পরিনি। এমনকি তাড়াহুড়োয় ঘড়িটাও পরতে ভুলে গেছি। শীতকাল। সবসময় ফুলহাতা জামা থাকবে, গয়না, শাঁখা-পলা প্রসঙ্গ নেপথ্যে থাকবে ধরে নিয়ে খুব নিশ্চিন্তে ছিলাম। বিকেলে বড়মার সঙ্গে দেখা। কখন এলাম, কদিন থাকবো সেসব প্রসঙ্গ মিটিয়ে নিয়েই আমার চুলের স্টাইল নিয়ে খুব রাগ করলো। বিবাহিত মেয়ের এতো ছোট চুল একদম মানায় না। তার উপর মাথায় একটুও তেল নেই। অভাবনীয় ব্যাপার। তার পরেই আমার জ্যাকেট সরিয়ে এহাত ওহাত খুঁজে অন্তত একটা চুড়ি আশা করছিল। আশাহত হয়েই পুরো চড় তুলে বড়মা আমাকে মারতে এলো। আমি ভয়ে গালটা সরিয়ে নিলাম। বড়মা হাসলো। গীতাপিসি এগিয়ে এসেই -- কে গো? কে কথা বলছে দেখি তো! ও, মা তুমি? কখন এসেছিস? সব শোনার পরই, এতো রোগা হয়

এক টুকরো মহানগর

ডানলপ থেকে উবেরে চড়ে বসেছিলাম। রবীন্দ্র ভারতী বাসস্যান্ডে গাড়ি বাঁদিকে দাঁড়িতে গেলো। আমি ভাবলাম পুলিশের কেস খেয়েছে বুঝি। কিন্তু তা নয়। দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্রলোক উবেরের কাছে এগিয়ে এলেন। উবেরওলা একগাল হেসে বললো, “এদিকে এখন আপনি? বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমি এই তোমাকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম। কোথায় যাচ্ছো এখন?” উবেরওলা বললো, “ওই সুলেখা আছে।” তারপর কি কথা হলো খেয়াল করলাম না, নিজের খেয়ালেই ছিলাম। আরো কিছুটা এসে আমি বললাম, “বাঁদিকের জানলার কাঁচটা একটু তুলে দেবেন? ঠাণ্ডা লাগছে।” -- “হাঁ হাঁ দিচ্ছি। আসলে উনি আমার মালিক। তাই কথা বলছিলাম।” -- “মালিক?” -- “হাঁ, আমার মালিক আছে।” -- “উনি গাড়ি কিনে উবের হিসেবে ভাড়া দিয়ে নিজে বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে?” -- “হাঁ, উনি পাব্লিক টান্সপোটে যাতায়াত করেন, মেট্টো, বাস, টেন।” -- “বাব্বা।” -- “হাঁ, উনি খুব ভালো। উনি পড়ান। যাদবপুরে, রবীন্দ্র ভারতীতে, এখন আবার ডানলপে আছে। তিন জায়গায় পড়ায়।”   -- “কি পড়ান? এমন তিন জায়গায়?” -- “ওই যারা জপে আছে তাদের পড়ায়।” -- “জপে মানে?” -- “জপে মানে, ওই কলেজ শেষ করে যারা

কাঠবিড়ালী

বৃষ্টিভেজা দিন। অলস মন। হাবিজাবি জিনিস মাথায় ভিড় করছে। তার মধ্যেই হঠাৎ মনে এলো, ‘ফজলো গয়লা’ কথাটা। এটা একটা নাম। হ্যাঁ, আমার বড়জেঠুর ডাকনাম ফজলো, আমরা জাতিতে গয়লা। লোকে ফজলো গয়লার ভাইঝি বললে খুব রাগ হতো, লজ্জাও পেতাম। পরে নামটা ভেবে মনে মনে হাসতাম। যদিও শোনা যায়, কৃষ্ণ গয়লার বাড়িতে জন্মেছে, তবুও আমার দিদিশাশুড়ির গয়লায় মেয়েতে একটু আপত্তি ছিলো। জাত জিজ্ঞেস করাতে আমার অধার্মিক বর যখন সেটা বলার প্রয়োজনই মনে করেনি, তখন তিনি হাঁক দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন -- হ্যাঁ রে তবে কি গয়লা?? যাকগে সেসব অন্য প্রসঙ্গ। সে আর একদিন হবে খন। বড়জেঠুর নাম গণেশ, মেজোজেঠুর নাম কার্তিক। তখনকার দিনে শ্বশুর, ভাসুর, বরের নাম ধরে ডাকতে নেই বলে কত ভালো ভালো নামই এমন বেঘোরে বাজে নামে পরিণত হয়ে গেছে। এইভাবেই গণেশ চন্দ্র ঘোষ - ফজলো গয়লা হয়ে গেছিলো।   আমার মা’ও ঠাকুমাদের পথ অনুসরণ করে বড়দের নাম না বলা অভ্যেস করেছিলো। খুব দরকারি কাজে, হয়তো আদমশুমারিতে বাড়ির সবার নাম বলতে হবে, বা পুজোর সময় নামগোত্র বলতে হবে, তখনো আকার ইঙ্গিতেই বুঝিয়ে দিতো। বড়জেঠুকে বোঝাতে গিয়ে বলতো পেট বড় বা পেটনাদা ঠাকু

মার্ফির নিয়ম

মার্ফির নিয়মে বলে, “Anything that can go wrong, will go wrong”. রিক্সাতে ওঠার পরই রিক্সাওলা চলতে শুরু করলো। একটানা পথের বন্ধুদের সাবধান করে দিতে দিতে। “এ ভাই সাবধান, সামলে।” উল্টোদিকের এক ট্রলিওলা অনেক মাল নিয়ে ফিরছিলো, তাকে বললো, “কি? মোটা ভাড়া? মোটা ভাড়া মনে হচ্ছে?” আমার কলিগ জগবন্ধুদা রিক্সাওলাকে একটু সতর্ক করে দিয়ে খুব শান্ত গলায় বললো, “ভাই একটু টেনে দিও। সাড়ে চারটেয় ট্রেন ধরতে হবে।” জগবন্ধুদা খুব শান্তশিষ্ট, নিরীহ মানুষ। রিক্সাওলা নিজের জ্ঞান জাহির করার একটা বিষয় পেলো। ঘুরে বলতে শুরু করলো, “হ্যাঁ রাস্তা দেখে সাবধানে যেতে হবে তো। আমরা রাস্তা দেখেই চালাই। আপনি বলেছেন আমি শুনলাম। কিন্তু সাবধানেই যাবো।” জগবন্ধুদা -- “হ্যাঁ, সাবধানেই যাবে, বলছি একটু টেনে দিও। আমি কতদূর যাবো জানো তো? আমার অনেক দূরে বাড়ি। সেই বনগাঁ লাইন।” রিক্সাওলা -- “ও বনগাঁ? সেই সেই সেই উত্তরে তো?” জগবন্ধুদা -- “হ্যাঁ উত্তরে, সেই বর্ডার লাইন। শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরতে হবে, এটা মিস করলে…” --- “সেই উত্তরে তো?” --- “হ্যাঁ, আমার যেতে তিনঘণ্টা লাগবে।” রিক্সাওলা অনেক হিসেব কষে বললো, “ত

গেস্ট হাউস

Image
তিনদিন ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটির গেস্ট হাউসে ছিলাম। সকালবেলা দুজন মাসি ঘর পরিষ্কার করে মুছে দিতো। মাসিরা ঘর ঝাঁট দিতে দিতে রুহানকে দেখে বললো, “ছেলে বাচ্চা আছে না ম্যাডাম?” প্রথমে বুঝতে না পেরে বললাম, “কি?” মাসি আবার বললো, “ছেলে বাচ্চা?” বললাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ ছেলে।” মাসি বললো, “ও বাংলা বোঝে?” বললাম, “হ্যাঁ বোঝে বলতে পারে, পড়তে, লিখতে সব পারে।” -- “আপনিও তো বাংলা বলতে পারেন ম্যাডাম। এখানে অনেক ম্যাডাম আসেন কিন্তু বেশিরভাগই বাংলা বলতে পারে না। আমাদের খুব কষ্ট হয়। কেউ বাংলা বলতে পারলে আমরা কথা বলতে পারি। কথা বললে একটু ভালো লাগে।” -- “আপনারা তো কলকাতা থেকে এসেছেন ম্যাডাম? আপনাদের দেখলেই বোঝা যায়। আমরা গ্রামে থাকি ম্যাডাম, আমাদের কথা কলকাতার মতো বালো বাংলা না, শুদ্ধ বাংলা না। আপনি আমাদের কথা বুঝতে পারছেন?” -- “হ্যাঁ পারছি।” -- “আমাদের অনেক কষ্ট ম্যাডাম। আমরা সকালবেলা বাড়ি থেকে দৌড়তে আসি, অনেক কাজ করি এখানে তেমন মাইনে পাই না।” -- “কতদূর থেকে আসো?” -- “আড়াই কিলোমিটার দূর থেকে।” -- “হেঁটে আসো কেন? অটো, টোটো বা বাস নেই?” -- “থাকবে না কেন ম্যাডাম? আমরা গাড়িতে খর