মামাবাড়ি

রুহান বহুদিন পর মামাবাড়ি আসবে, তার উৎসাহই আলাদা। তাই আসার আগে ও পরে কদিন থাকা, এখানে কী কী করা, সেই নিয়ে অনেক দরকষাকষি হয়েছে। সেই সুযোগে আমিও ওর কিছু মতামত নেওয়ার চেষ্টা করেছি।

----

আসার আগেরদিন রুহানকে বললাম, “বাবান মামাবাড়িতে তোমার ছোট ছোট দুজন দিদি আছে, তাদের জন্যে কি নিয়ে যাবো?”

সে ভাবনা চিন্তা করে বললো, “মা প্রত্যেকবার তো চকলেট, মিষ্টি এইসব নিয়ে যাও, এবারে নতুন কিছু একটু নিয়ে চলো।”

বললাম, “নতুন কি কি বলো?”

বললো, “এই যেমন হেয়ার ব্যান্ড, ক্লিপ এইসব।”

বললাম, “এখন আর সেসব কোথায় পাবো? এই সন্ধ্যেবেলা কোথায় কিনি বলো?”

তখন বললো, “তাহলে বরং ওই হার, চুড়ি, কানের দুল নিয়ে চলো।”

“সেসবই বা কোথায় কিনবো এখন? সামনে কোনো দোকান নেই।”  

“কেন মা, সেনকো গোল্ড তো আছে, ওখান থেকে কেনা যাবে না?”

----

এবারে আমরা একটা অন্য রাস্তা দিয়ে এসেছি।  গ্রামের মধ্যে দিয়ে আসার সময় এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে রাস্তার ম্যাপ দেখতে হয়েছে। তখন রুহান গাড়ির সামনে থেকে উপর দিকে তাকিয়ে বললো, “মা দ্যাখো কি সুন্দর কর্ন, ভুট্টা এইসব দিয়ে সাজিয়েছে।”

আমি  অবাক হয়ে বললাম, “কোথায়? এদিকে তো ভুট্টা হয়না।” বলেই, আমি এদিক ওদিক তাকালাম, কোথাও কিছু দেখলাম না।

তখন খুব রাগ করে বললো, “তুমি গাড়ির সামনে থেকে উপর দিকে তাকাও।”

তাকিয়ে দেখি কারেন্টের তার বেয়ে ধুঁধুলের লতানো গাছ রাস্তার এদিক থেকে ওদিক অব্দি গেছে, এবং সেখানে সারি সারি লম্বা হয়ে ঝুলছে অসংখ্য ধুঁধুল। সেগুলোই রুহানের ভুট্টা।

----

আজ বিকেলে দৌড়ে এসে, “মা আমি একটা নতুন ধরণের পশু দেখেছি। গ্রে কালার। একটু ব্ল্যাক আর হোয়াইটও আছে। তারা খুব বন্ধু। আমি রাস্তায় চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলাম, তারা আমাকে কিছু না করে চলে গেলো। আমাকে কিচ্ছু বলেনি।”

নতুন ধরণের পশু শুনে খুব উৎসাহিত হয়ে বরকে বললাম, “চলো তো দেখি, ও কি নতুন পশু বলছে।”

বর ওকে নিয়ে এগিয়ে এলো। রুহান বাবাকে ঝোপের মধ্যে দেখিয়ে বললো, “ওই দ্যাখো।”

সে দেখে আমাকে বললো, বেজি না নেউল বলে, সেটা। একটু পরেই আমিও গেলাম। তারপরেই পশুরা আবার উঁকি দিলো। আমি বললাম, “হ্যাঁ, ওগুলো নেউল।”

কিছুক্ষণ পর ছেলের এক দিদি এলো। তাকে রুহান জিজ্ঞেস করলো, “তুই ওই পশুগুলোর নাম জানিস?”

সে বললো, “হ্যাঁ, লেউল।”

ছেলে এসে আমাকে বললো, “মা তুমি ভুল বলেছো, ওগুলোকে নেউল না লেউল বলে।”

----

পাশের গ্রামে বন্ধু বাড়ি। গাড়ি করে যাওয়ার সময় ছেলেকে অনেক গল্প বলতে বলতেই যাচ্ছিলাম আমরা। কোথায় আমাদের স্কুল, কীভাবে যেতাম। ওর বাবা ছোটবেলায় কোথায় থাকতো এইসব। রাস্তার মধ্যে বিভিন্ন গাছ দেখতে দেখতে একবার বললো, মা, “আমি বাঁশগাছ দেখেছি।”

আমি বললাম, “তুমি চেনো?”  

বললো,  “হ্যাঁ, চিনি তো।”

কিছুটা গিয়ে একটা গাছ দেখে খুব চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে, “মা মা কত্ত আঙুর? আমি আঙুর গাছ দেখেছি।”
আমি অজ্ঞান টজ্ঞান না হয়েই বললাম, “আঙুর?”

বললো, “হ্যাঁ। অনেক আঙুর হয়েছে।”

বললাম, “তুমি গাছটা দেখাতে পারবে?”

বললো, “সে তো অনেক পিছনে চলে গেছে।”

ফেরার সময় দেখি একটা আমড়া গাছে প্রচুর ছোট ছোট আমড়া থোকা থোকা হয়ে ঝুলছে! খুব উৎসাহের সঙ্গে দেখিয়ে বললো, “ওই তো! মা দ্যাখো কত্ত আঙুর হয়েছে।”

----

মনে আছে ছোটবেলায় শহর থেকে আমাদের আত্মীয়রা গ্রামে এলে তাদের পাগলামো দেখে হাসাহাসি করতাম। এখন রুহানও সেরকমই করে। তবে ও বড্ড ছোট। আশাকরি ও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ওকে সব শিখিয়ে নিতে পারবো। :-)

Comments

Popular posts from this blog

অন্ধকারের উৎস হতে

সবজিওয়ালা - ২

কুলকুলতির ব্রত