যারা পাল্টায়নি

আগের মতো খুব ঘন ঘন আর গ্রামে আসা হয়না। যখন আসি, অনেক কিছুই অচেনা লাগে। কতো নতুন নতুন ঘরবাড়ি, দোকান গজিয়ে উঠেছে। বদলে গেছে চারপাশ। ভ্রু কুঁচকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর অভ্যস্ত হই আমার পুরোনো জায়গাটার সঙ্গে। ভ্রু কুঁচকাতে হয়না শুধু পুরোনো মানুষগুলোর সঙ্গে মেশার সময়।


সকালে বেরোনোর সময় গয়নার বাক্স খুলে বসেও, আমার মতো করে সাত পাঁচ ভেবে নিয়ে একটা গয়নাও পরিনি। এমনকি তাড়াহুড়োয় ঘড়িটাও পরতে ভুলে গেছি। শীতকাল। সবসময় ফুলহাতা জামা থাকবে, গয়না, শাঁখা-পলা প্রসঙ্গ নেপথ্যে থাকবে ধরে নিয়ে খুব নিশ্চিন্তে ছিলাম।


বিকেলে বড়মার সঙ্গে দেখা। কখন এলাম, কদিন থাকবো সেসব প্রসঙ্গ মিটিয়ে নিয়েই আমার চুলের স্টাইল নিয়ে খুব রাগ করলো। বিবাহিত মেয়ের এতো ছোট চুল একদম মানায় না। তার উপর মাথায় একটুও তেল নেই। অভাবনীয় ব্যাপার। তার পরেই আমার জ্যাকেট সরিয়ে এহাত ওহাত খুঁজে অন্তত একটা চুড়ি আশা করছিল। আশাহত হয়েই পুরো চড় তুলে বড়মা আমাকে মারতে এলো। আমি ভয়ে গালটা সরিয়ে নিলাম। বড়মা হাসলো।


গীতাপিসি এগিয়ে এসেই -- কে গো? কে কথা বলছে দেখি তো! ও, মা তুমি? কখন এসেছিস? সব শোনার পরই, এতো রোগা হয়ে গেছিস কেন মা? ইশ বাবা! চেহারাটার কি ছিরি হয়েছে, য্যামন মা, তার ত্যামন ব্যাটাও হয়েছে। ব্যাটাকেও কি খেতে দিস না?  


এক কাকীমা বললো, আমি তোদের বাড়ির কাছে লাল ট্যাস্কিটা দেখেই বুঝেছি তুই এসেছিস। কেমন আছিস? ছেলে কই? জামাই ভালো আছে? বাব্বা তুই তো চুলটাকে একেবারে মুড়িয়ে কেটে ফেলেছিস, কি দিনকাল এলো। তখন প্রতিদিন তেল দিয়ে, টেনে বেঁধে বড় করলাম আর এখন দ্যাখো!!


মুচকি হাসলাম।

মনে মনে বললাম, বড়মা, কাকীমা, পিসি তোমরা এমনি করেই ভালোবেসো। এই ভালোবাসাটার অপেক্ষাতেই থাকি।

Comments

Popular posts from this blog

অন্ধকারের উৎস হতে

সবজিওয়ালা - ২

কুলকুলতির ব্রত