Posts

Showing posts from September, 2016

পাট ভাঙা আনন্দ

— “পুজোয় কটা হলো? কি কি নিলি?” — “কটা শাড়ি, কটা টপ, কটা জিন্স?” — “সত্যি বলছি পুজোর নাম করে এখনো কিছুই কিনিনি। এমনকি ছেলেকেও কিনে দিই নি।” কারো কারো একমাস আগেই পুজোর শপিং কমপ্লিট। কারো কারো আলাদা করে পুজোর শপিং নেই। সবাই তো এখন সারাবছর ধরে কিছু না কিছু কিনতেই থাকে। একমাস আগেও সেল চলছিলো পুরোদমে। সেল না চললেও দোকানে গিয়ে কোনো কিছু পছন্দ হয়ে গেলেই কিনে ফেলা। দরকার থাক বা না থাক। এখনো আলমারি খুঁড়ে দেখলে একবারও পরা হয়নি এমন অনেক পোষাকই উদ্ধার হবে। আমাদের ছোটবেলায় পুজোর অনেক আগে থেকে জামা-কাপড় কেনার চল ছিলো না। পঞ্চমীর দিন বিকেল অব্দি জানা থাকতো না পুজোয় কটা নতুন জামা হবে, বা আদৌ হবে কিনা। ষষ্ঠী সপ্তমীর আগে তো নয়ই, কখনো কখনো অষ্টমীও গড়িয়ে যেত। তারপর দেখা যেত বাবা দুপুরবেলা বাড়ি ফিরছে সবার জন্যে কিছু না কিছু কিনে নিয়ে। একটু বড় হতে জামার সংখ্যা বাড়লো। জামা পছন্দ করে কেনার স্বাধীনতাও। দাদাদের সঙ্গে দোকানে গিয়ে পছন্দ করে নিতে পারতাম। প্রথম যখন কলকাতায় এলাম, তখন বর্ষার ঠিক পরে পরেই সবার পুজোর বাজার করা দেখে অবাক হয়েছিলাম। দু-আড়াইমাস আগে থেকে প্যাণ্ডেল তৈরির মতোই সা

কাদা

ছোটবেলা থেকেই কাদায় খুব ভয় পেতাম। গা ঘিনঘিন করতো। আজও করে। একটু বৃষ্টি হলেই আর বাড়ি থেকে বেরোতে ইচ্ছে করতো না। পুকুর পাড়ের কাদাকে এড়ানো অসম্ভব বলে। নিতান্ত দরকারে বেরোতে হলে নাকমুখ কুঁচকে কোনোরকমে যেতাম। পাড়ার চন্দনদা আমার যাওয়া দেখে বলতো - "আ মলো অমন গোড়ালি উঁচু করে, আঙুল দিয়ে শহরের মেয়ের মতো হাঁটিস কেনো? কেমন থ্যাপাস থ্যাপাস করে পা ফেলে হাঁটবি তবেই না গ্রামের মেয়ে!" হেসে চলে যেতাম। বৃষ্টি ভালোবাসি খুব। স্বপ্ন ছিলো বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমি স্কুলে যাবো, মাথায় ছাতা কিন্তু পায়ে চটি থাকতে হবে। পায়ে কাদা লাগা চলবে না। সম্ভব হয়নি। এখন লাল মোরাম আর কংক্রিটে মোড়া রাস্তা, একটু ঘুরপথে গিয়ে পুকুর পাড়ের কাদাও এড়ানো যায়। আমি স্কুলে পড়ি না। এখন বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে জুতো পায়ে কলেজ যেতে পারি তবুও 'কাদা' ছিটকে গায়ে আসে। কাদার ধর্মই তাই। পাত্তা দিই না। ছোটবেলায় কাদা দিয়ে বানানো পুতুল পাল্কি নিয়ে অনেক খেলেছি। একটাও নিজে বানাতাম না। মাখা আটা দিয়ে অনেক পুতুল বানিয়েছি। কিন্তু সেটা যত্ন করে ব্যাটারির বাক্সে ভরে শাড়ি-গয়না পরিয়ে রাখতে পারতাম না। ভেঙে যেতো। তাই কাদা দিয়ে যারা বানা

মহিলা কামরা - ৪

ফেরার সময় দেখি মহিলা কামরার ছবিটা বেশ অন্যরকম থাকে। এমনকি দুপুরের ট্রেন একরকম হয়, বিকেলের ট্রেন আর একরকম। দুপুরের ট্রেন সাধারণত খুব ফাঁকা হয়। সবাই মোটামুটি হাত পা ছড়িয়ে, অন্য সিটে দু-পা তুলে যায়, কেউবা শুয়েও। বিশেষ করে যারা ঠিকে কাজ করে বা বাজার থেকে ফেরে তারা। কোনো কোনো মাসি তো বাজার ফেরত বাকি সবজিগুলো গেটের ধারে ছড়িয়ে বিক্রি করতে বসে যায়। শুকনো করলা, পটল, বীনস, কাঁচালঙ্কা, শাকও থাকে। তখন তারা পারলে মোটামুটি সবগুলোই দশ টাকাতে দিয়ে দেয়। মোসাম্বিওলা পিন্টু তখন গেটের মুখে ফাঁকা জায়গায় বসে তার লেবুর বস্তা থেকে লেবুগুলো একটা একটা করে নিয়ে গামছা দিয়ে মুছে মুছে ঝুড়িতে রাখে। এইসময় বাদামচাক, ওয়াফেল, টক-ঝাল, লেবু, আদা, আনারস লজেন্সওলা সবাইকেই ট্রেনে দেখি। কিন্তু এরা সবাই অন্য, দু - চারজন বাদ দিলে আর কাউকে সকালে যাবার ট্রেনে দেখা যায় না।  একজন ফেরিওলা আছে উঠেই প্রচন্ড নাকি সুরে শুরু করে দেয় — “এই কাজু না, কিসমি না, আমসত্ব”। তার ঝুড়িতে থাকে ছোট ছোট কাজু, কিসমিস, আর আমসত্বের প্যাকেট। পাঁচ আর দশ টাকার। আর একদম ছোট ছোট আমসত্বের পুরিয়া এক টাকা করে। কিন্তু সে কেনো যে — “কাজু না, কিসম