পাট ভাঙা আনন্দ
— “পুজোয় কটা হলো? কি কি নিলি?”
— “কটা শাড়ি, কটা টপ, কটা জিন্স?”
— “সত্যি বলছি পুজোর নাম করে এখনো কিছুই কিনিনি। এমনকি ছেলেকেও কিনে দিই নি।”
কারো কারো একমাস আগেই পুজোর শপিং কমপ্লিট। কারো কারো আলাদা করে পুজোর শপিং নেই। সবাই তো এখন সারাবছর ধরে কিছু না কিছু কিনতেই থাকে। একমাস আগেও সেল চলছিলো পুরোদমে। সেল না চললেও দোকানে গিয়ে কোনো কিছু পছন্দ হয়ে গেলেই কিনে ফেলা। দরকার থাক বা না থাক। এখনো আলমারি খুঁড়ে দেখলে একবারও পরা হয়নি এমন অনেক পোষাকই উদ্ধার হবে।
আমাদের ছোটবেলায় পুজোর অনেক আগে থেকে জামা-কাপড় কেনার চল ছিলো না। পঞ্চমীর দিন বিকেল অব্দি জানা থাকতো না পুজোয় কটা নতুন জামা হবে, বা আদৌ হবে কিনা। ষষ্ঠী সপ্তমীর আগে তো নয়ই, কখনো কখনো অষ্টমীও গড়িয়ে যেত। তারপর দেখা যেত বাবা দুপুরবেলা বাড়ি ফিরছে সবার জন্যে কিছু না কিছু কিনে নিয়ে।
একটু বড় হতে জামার সংখ্যা বাড়লো। জামা পছন্দ করে কেনার স্বাধীনতাও। দাদাদের সঙ্গে দোকানে গিয়ে পছন্দ করে নিতে পারতাম।
প্রথম যখন কলকাতায় এলাম, তখন বর্ষার ঠিক পরে পরেই সবার পুজোর বাজার করা দেখে অবাক হয়েছিলাম। দু-আড়াইমাস আগে থেকে প্যাণ্ডেল তৈরির মতোই সালোয়ারের পিস কিনে বানাতে দেওয়া, শাড়ির ফলস পিকো। হয়ে গেলে বাড়িতে পুজোর আগে যত লোক আসে তাদের দেখানো। এটা পঞ্চমীতে, এটা ষষ্ঠী, সপ্তমীর সকাল, অষ্টমীর বিকেল, নবমীর রাত সব আলাদা আলাদা ট্যাগ লাগানো।
পরে আমিও তাই করেছি। ওই ট্যাগিয়ে রাখা। জামাগুলো দেখাতে দেখাতে সেগুলোর পাট বলে আর কিছু থাকতো না।
গ্রামে তখন মা জেঠিমাদের এতো ঝক্কি ছিলো না। দিব্যি নতুন শাড়ি পাট ভেঙে পরে চললো অঞ্জলি দিতে। সুতির শাড়ি হলে পিছন থেকে গুটিয়ে অর্ধেক সায়া বেরিয়ে যায়, তবুও তারা তাতে বেশ স্বচ্ছন্দ। ফলস পিকোর গল্প তাদের ছিলো না। এখনও গ্রামে কোনো কোনো বৌদি বা কাকীমাকে দেখেছি পুজোয় ফলস পিকো ছাড়া নতুন শাড়িটা পরে নিতে।
এখন শহর বা গ্রাম নয়, এই অগোছালো হয়ে বেরোনোটা আজ আমরা আর ভাবতে পারি না। অনেক আগে থেকেই কোন শাড়ির সঙ্গে কোন ব্যাগ, কোন টপের সঙ্গে কোন জিন্স, টিপ পরবো কিনা, এটার সঙ্গে মাটির গয়না নাকি ডোকরা, নাকি গোল্ডেন, না সিলভার কালার সবই আগে থেকে ঠিক করা হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিপাটি সাজে নতুন কাপড়ের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা পাট ভাঙা আনন্দ আর নেই। কোনটার বা গন্ধই গেছে চলে। পুজোর আগে হঠাৎ পাওয়ার যে আনন্দ সেটা আর ফিরে আসবে না।
— “কটা শাড়ি, কটা টপ, কটা জিন্স?”
— “সত্যি বলছি পুজোর নাম করে এখনো কিছুই কিনিনি। এমনকি ছেলেকেও কিনে দিই নি।”
কারো কারো একমাস আগেই পুজোর শপিং কমপ্লিট। কারো কারো আলাদা করে পুজোর শপিং নেই। সবাই তো এখন সারাবছর ধরে কিছু না কিছু কিনতেই থাকে। একমাস আগেও সেল চলছিলো পুরোদমে। সেল না চললেও দোকানে গিয়ে কোনো কিছু পছন্দ হয়ে গেলেই কিনে ফেলা। দরকার থাক বা না থাক। এখনো আলমারি খুঁড়ে দেখলে একবারও পরা হয়নি এমন অনেক পোষাকই উদ্ধার হবে।
আমাদের ছোটবেলায় পুজোর অনেক আগে থেকে জামা-কাপড় কেনার চল ছিলো না। পঞ্চমীর দিন বিকেল অব্দি জানা থাকতো না পুজোয় কটা নতুন জামা হবে, বা আদৌ হবে কিনা। ষষ্ঠী সপ্তমীর আগে তো নয়ই, কখনো কখনো অষ্টমীও গড়িয়ে যেত। তারপর দেখা যেত বাবা দুপুরবেলা বাড়ি ফিরছে সবার জন্যে কিছু না কিছু কিনে নিয়ে।
একটু বড় হতে জামার সংখ্যা বাড়লো। জামা পছন্দ করে কেনার স্বাধীনতাও। দাদাদের সঙ্গে দোকানে গিয়ে পছন্দ করে নিতে পারতাম।
প্রথম যখন কলকাতায় এলাম, তখন বর্ষার ঠিক পরে পরেই সবার পুজোর বাজার করা দেখে অবাক হয়েছিলাম। দু-আড়াইমাস আগে থেকে প্যাণ্ডেল তৈরির মতোই সালোয়ারের পিস কিনে বানাতে দেওয়া, শাড়ির ফলস পিকো। হয়ে গেলে বাড়িতে পুজোর আগে যত লোক আসে তাদের দেখানো। এটা পঞ্চমীতে, এটা ষষ্ঠী, সপ্তমীর সকাল, অষ্টমীর বিকেল, নবমীর রাত সব আলাদা আলাদা ট্যাগ লাগানো।
পরে আমিও তাই করেছি। ওই ট্যাগিয়ে রাখা। জামাগুলো দেখাতে দেখাতে সেগুলোর পাট বলে আর কিছু থাকতো না।
গ্রামে তখন মা জেঠিমাদের এতো ঝক্কি ছিলো না। দিব্যি নতুন শাড়ি পাট ভেঙে পরে চললো অঞ্জলি দিতে। সুতির শাড়ি হলে পিছন থেকে গুটিয়ে অর্ধেক সায়া বেরিয়ে যায়, তবুও তারা তাতে বেশ স্বচ্ছন্দ। ফলস পিকোর গল্প তাদের ছিলো না। এখনও গ্রামে কোনো কোনো বৌদি বা কাকীমাকে দেখেছি পুজোয় ফলস পিকো ছাড়া নতুন শাড়িটা পরে নিতে।
এখন শহর বা গ্রাম নয়, এই অগোছালো হয়ে বেরোনোটা আজ আমরা আর ভাবতে পারি না। অনেক আগে থেকেই কোন শাড়ির সঙ্গে কোন ব্যাগ, কোন টপের সঙ্গে কোন জিন্স, টিপ পরবো কিনা, এটার সঙ্গে মাটির গয়না নাকি ডোকরা, নাকি গোল্ডেন, না সিলভার কালার সবই আগে থেকে ঠিক করা হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিপাটি সাজে নতুন কাপড়ের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা পাট ভাঙা আনন্দ আর নেই। কোনটার বা গন্ধই গেছে চলে। পুজোর আগে হঠাৎ পাওয়ার যে আনন্দ সেটা আর ফিরে আসবে না।
Comments
Post a Comment