Posts

Showing posts from November, 2017

মার্ফির নিয়ম

মার্ফির নিয়মে বলে, “Anything that can go wrong, will go wrong”. রিক্সাতে ওঠার পরই রিক্সাওলা চলতে শুরু করলো। একটানা পথের বন্ধুদের সাবধান করে দিতে দিতে। “এ ভাই সাবধান, সামলে।” উল্টোদিকের এক ট্রলিওলা অনেক মাল নিয়ে ফিরছিলো, তাকে বললো, “কি? মোটা ভাড়া? মোটা ভাড়া মনে হচ্ছে?” আমার কলিগ জগবন্ধুদা রিক্সাওলাকে একটু সতর্ক করে দিয়ে খুব শান্ত গলায় বললো, “ভাই একটু টেনে দিও। সাড়ে চারটেয় ট্রেন ধরতে হবে।” জগবন্ধুদা খুব শান্তশিষ্ট, নিরীহ মানুষ। রিক্সাওলা নিজের জ্ঞান জাহির করার একটা বিষয় পেলো। ঘুরে বলতে শুরু করলো, “হ্যাঁ রাস্তা দেখে সাবধানে যেতে হবে তো। আমরা রাস্তা দেখেই চালাই। আপনি বলেছেন আমি শুনলাম। কিন্তু সাবধানেই যাবো।” জগবন্ধুদা -- “হ্যাঁ, সাবধানেই যাবে, বলছি একটু টেনে দিও। আমি কতদূর যাবো জানো তো? আমার অনেক দূরে বাড়ি। সেই বনগাঁ লাইন।” রিক্সাওলা -- “ও বনগাঁ? সেই সেই সেই উত্তরে তো?” জগবন্ধুদা -- “হ্যাঁ উত্তরে, সেই বর্ডার লাইন। শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরতে হবে, এটা মিস করলে…” --- “সেই উত্তরে তো?” --- “হ্যাঁ, আমার যেতে তিনঘণ্টা লাগবে।” রিক্সাওলা অনেক হিসেব কষে বললো, “ত

গেস্ট হাউস

Image
তিনদিন ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটির গেস্ট হাউসে ছিলাম। সকালবেলা দুজন মাসি ঘর পরিষ্কার করে মুছে দিতো। মাসিরা ঘর ঝাঁট দিতে দিতে রুহানকে দেখে বললো, “ছেলে বাচ্চা আছে না ম্যাডাম?” প্রথমে বুঝতে না পেরে বললাম, “কি?” মাসি আবার বললো, “ছেলে বাচ্চা?” বললাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ ছেলে।” মাসি বললো, “ও বাংলা বোঝে?” বললাম, “হ্যাঁ বোঝে বলতে পারে, পড়তে, লিখতে সব পারে।” -- “আপনিও তো বাংলা বলতে পারেন ম্যাডাম। এখানে অনেক ম্যাডাম আসেন কিন্তু বেশিরভাগই বাংলা বলতে পারে না। আমাদের খুব কষ্ট হয়। কেউ বাংলা বলতে পারলে আমরা কথা বলতে পারি। কথা বললে একটু ভালো লাগে।” -- “আপনারা তো কলকাতা থেকে এসেছেন ম্যাডাম? আপনাদের দেখলেই বোঝা যায়। আমরা গ্রামে থাকি ম্যাডাম, আমাদের কথা কলকাতার মতো বালো বাংলা না, শুদ্ধ বাংলা না। আপনি আমাদের কথা বুঝতে পারছেন?” -- “হ্যাঁ পারছি।” -- “আমাদের অনেক কষ্ট ম্যাডাম। আমরা সকালবেলা বাড়ি থেকে দৌড়তে আসি, অনেক কাজ করি এখানে তেমন মাইনে পাই না।” -- “কতদূর থেকে আসো?” -- “আড়াই কিলোমিটার দূর থেকে।” -- “হেঁটে আসো কেন? অটো, টোটো বা বাস নেই?” -- “থাকবে না কেন ম্যাডাম? আমরা গাড়িতে খর

কড়ুই

Image
শীতের ঠিক আগে আগে মুর্শিদাবাদ থেকে মিস্ত্রী আনা হতো কড়ুই তৈরি করার জন্য। তারা এসে অনেকদিন থাকতো, খেতো, আর কড়ুই বুনতো। এই কাজটা সবাই পারে না। একটা কড়ুই বুনতে অনেকদিন সময় লাগতো। আমি ছোটবেলায় দুটো কড়ুই বোনা দেখেছি। মড়াই বোনাও দেখেছি একবার। মড়াইটা খড় পাকিয়ে বিচালি তৈরি করে বুনতে হতো, আর কড়ুইটা বাঁশের বাতা দিয়ে। মড়াই নিয়মমতো ছোট-বড় করা যেতো। কড়ুই একবার তৈরি হয়ে গেলে ফিক্সড। ষাট মণ, আশি মণ, নানা মাপের কড়ুই হতো।   প্রথমে মাটিতে বাতা পুঁতে পুঁতে গোল করে পানের ডাবরের মতো একটা ফ্রেম বানানো হতো। তারপর তারমধ্যে আরো সরু সরু বাতা দিয়ে দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করে কড়ুই বোনা হতো। ঝুরি, চুপড়ি, ধামা বানানোর মতোই একটা পদ্ধতি। কড়ুইয়ের ফ্রেম এতো বড় তাই দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া যেতো না। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়ি হলে, দড়ি দিয়ে বেঁধে পাঁচিল টপকে অনেক কষ্ট করে ভিতরে নিয়ে যেতে হতো। অনেক লোকও লাগতো তার জন্যে। এইসব কঠিন কঠিন কাজ করার সময় তারা মুখে নানা আওয়াজ করতো। গান করতো। ছড়ার মতো করেও অনেক লাইন বলতো। সেগুলো শুনতে বেশ ভালো লাগতো। কিন্তু উচ্চারণ বুঝতে পারতাম না বলে