Posts

Showing posts from December, 2016

কুলকুলতির ব্রত

Image
মেয়েদের ছোটবেলা মানেই মা বা ঠাকুমার শাড়ি। মাথায় গামছা বা ওড়না দিয়ে লম্বা চুল কিংবা খোঁপা। পুতুলের মা সাজা কিংবা নাচের দিদিমণি। অথবা স্কুলের। আমরাও ছিলাম কয়েকজন। মা, ছোটঠাকুমা বা মেজমার শাড়ি পরে, গামছা দিয়ে চুলের বেণি করে দিব্যি নাচতাম, পুতুল খেলতাম, রেলিংগুলোকে ছাত্র সাজিয়ে বিজ্ঞের মতো পড়া কম-বেশি সবাই বুঝিয়েছি। আমার ঠাকুমা থান পরতো তাই তার শাড়ি পরতে দিতো না। এই শাড়ি পরাটাই ছিলো খুব লোভনীয় ব্যাপার। তার জন্যে অনেকেই সন্ধ্যে দিতে, কুলকুলতির ব্রত করতে ভালোবাসতো। আজকাল শাড়িরা বন্দী ন্যাপথলিনে। ব্রতেরাও বিলীন। শাড়ি পরে পরিপাটি হয়ে সন্ধ্যে দেওয়া, কুলকুলতি করা বেশ পছন্দের কাজ ছিলো। কার্তিক মাসের পয়লা থেকে কুলকুলতির পুজো করতে হতো। টানা একমাস পুজো করে মাসের শেষ দিনে ভোরবেলা জলে ভাসিয়ে চান করতে হতো। একবার করলে পরপর তিনবছর বা পাঁচবছর করতে হতো। পুজোর জন্যে রোজ তিনটে করে প্রদীপ, ফুল, কুলপাতা, দূর্বা লাগতো। একমাস রোজ বিকেলে ঘুরে ঘুরে সবার বাগান  ফুল তোলাটা তখন একটা জরুরি কাজ। এই পুজোয় কুলপাতা অবশ্যই দিতে হতো। তাই বাড়ির কাছের কুলগাছ বলতে তখন চৌধুরীদের কুলগাছ। কেউ কেউ কুলপাতা তুলতে গিয়ে

মহিলা কামরা - ৫

ঠান্ডা পড়েছে। রঙবেরঙের শাল সোয়েটারে মোড়া মহিলা কামরা। উলের লম্বা কুর্তিও দেখা যাচ্ছে দু একটা। এই তো আজ বাদে কাল স্কুল কলেজ হয়ে এক সপ্তাহের জন্যে নিশ্চিন্ত। ট্রেনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গল্পেরা ছুটে চলেছে নৈনিতাল থেকে গ্যাংটক। মাইনাস সতেরো ডিগ্রি থেকে মাইনাস দশ। গল্পেরাও পায় উষ্ণতা। যেমন মোয়ারা পাচ্ছে আদিখ্যেতা। বন্ধ জানলার কাঁচ। তাই ভানুদাকে অনেক ডেকেও সিটি গোল্ডের গয়নার গ্যারান্টি পিরিয়ডটা লিখিয়ে নেওয়া গেলো না। হতাশ গলা — “উফ! আবার সেই কতদিন পরে আসা, মনে থাকবে তো ভানুদার!” এর মধ্যেই একটা বড় সমস্যা! না সমস্যা ঠিক নয়, কারণ ওরাই সমস্যা দূর করে। বলা ভালো একটা সম্পর্কের টানাপোড়েন। দু-তরফের। শহরে। এখন গ্রামেও। আগেও ছিলো, এখনো আছে, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে।  এক দিদিমণি তাঁর সমস্যার কথা শুরু করলেন। বাড়িতে  ছোট বাচ্চা আছে। মূলত তাকে দেখার জন্যেই সবসময়ের জন্যে একজন লোক রেখেছেন। বাড়িতে দিদিমণির মা থাকেন, তিনিই প্রায় সবকিছু করেন। সুবিধার জন্যে একজন লোক রাখা হয়েছে।  দিদিমণি বেশ শান্ত গলায় সমস্যাগুলো বলতে থাকলেন। অন্য এক দিদিমণি বেশ জোর গলায় অনেক পরামর্শ দিতে থাকলেন।  সেই কাজের মেয়

লক্ষ্মী ও সরস্বতী

যাদবপুর স্টেশন। যাবো বারুইপুর। সামনের মহিলা কামরা। অনেক ভিড় দেখে এক অল্প বয়সী সুন্দরী মহিলা জিজ্ঞেস করলেন - “আচ্ছা, এই কামরায় উঠতে পারবো? যা ভিড় দেখছি …”। বললাম, “জানি না। আমিও আজ প্রথম।” একটু এগিয়ে এক মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম - “কোন ট্রেন আসছে?” তিনি উত্তর দিলেন - “লক্ষ্মী।” এ নামটার সঙ্গে আমি পরিচিত। আমার বর যখন ট্রেনে যাতায়াত করে, তখন ফিরে এসে কোনোদিন বলে - আজ লক্ষ্মীতে এলাম, কোনোদিন বা ডায়মণ্ড। প্রথম প্রথম নামগুলো নিয়ে আমরা হাসাহাসি করতাম, এখন সয়ে গেছে। লক্ষ্মী এলো। সবাই ওঠার পর আমিও লক্ষ্মী মেয়ের মতো আস্তে আস্তে উঠলাম। কষ্ট হলো না। উঠেই জিজ্ঞেস করলাম, “বারুইপুর কোনদিকে পড়বে?” তাহলে সেদিকেই দাঁড়াবো। এক মহিলা বললেন “দেরি আছে, ভিতর দিকে চলে যান।” গেট থেকে একটু এগিয়ে ডান দিকের সিট অব্দি গেলাম। সিটের একদম শুরুতে বসা এক মহিলা আর তাকে ধরে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন আর এক মহিলা। দুজনে পরিচিত। দুজনের খুব গল্প। আমি দাঁড়াতেই সিটে বসা মহিলা বললেন, “পিছনে নিজের ঠেল রাখো।” বললাম — “কী?” তিনি আবার একই কথা বলে বুঝিয়ে দিলেন - “চেপে শক্ত হয়ে দাঁড়াও খুব ঠেলাঠেলি হবে, যেন পড়ে যে

ঘেঁটু

মনে পড়ে, রোজ সকালে গাড়ি বারান্দায় পড়তে বসতাম। শীতকাল হলে পূর্বদিক, গরমকালে পশ্চিম। পড়তে বসে পড়ার থেকে মন দিয়ে এদিক সেদিক দেখাটাই ছিলো বেশি দরকারী কাজ। এমনই একটা দরকারী কাজ ছিলো ছোটঠাকুমার ঘেঁটু পুজো দেখা। প্রতি বছর ফাল্গুনের সংক্রান্তির সকালবেলা এই পুজো হতো। পুজোর জন্যে লাগতো মুড়ি ভাজার পুরোনো ঝুলওলা একটা  মাটির খোলা, তেল হলুদে চোবানো ছোট ন্যাকড়া, তিনটে কড়ি, ছোট ছোট তিনটে গোবর দিয়ে পাকানো বল, ঘেঁটু ফুল, সিঁদুর, ধান, দূর্বা। মাটির খোলাটা নিকোনো জায়গায় বসিয়ে দিতো। তার উপর তিনটে গোবরের বল লাগিয়ে, সেই বলগুলো কড়ি, সিঁদুর ঘেঁটু ফুল দিয়ে সাজাতো। খোলার উপরে ন্যাকড়াটা বিছিয়ে দিতো। এই পুজোর জন্যে আলাদা করে পুরোহিত লাগতো না, বিধবা মহিলারাই করতে পারতো। বাড়ির সামনে বা একটু দূরে তিনমাথা, চারমাথার মোড়ে পুজোটা করতে দেখেছি। কারণ পুজোর পরে ছেলেরা মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে খোলাটা ভেঙে দিয়ে দৌড়ে পুকুরের জলে হাত পা ধুয়ে আসতো। সেটা ছোটঠাকুমাই বলে দিতো - "দৌড় দৌড় শিগগিরি পুকুরের জলে হাত পা ধুয়ে আয়, না হলে খোস পাঁজরা হবে।" ছেলেগুলো খোলাটা ভেঙে দিয়ে দৌড়তো। কেউ কেউ এসে বলতো - "ছোটঠাকুমা এই