ভেসে যায়
“মালতী, ছটা ছোটো চামচ আছে কিনা দ্যাখো তো।”
মালতী, দিদিকে দেখিয়ে দেখিয়ে গুনতে থাকে, “এক, দুই, তিন…..।”
“ছটা নেই দিদি, পাঁচটা আছে।”
“সত্যি আমি কি বোকা দ্যাখো, এখন তো আর পুকুর ঘাটে বাসন মাজা নয় যে, মাজতে গিয়ে কিছু চামচ হারিয়ে যাবে। সে একটা সময় ছিলো, এক বোঝা বাসন নিয়ে পুকুরে মাজতে গেলো। তার কিছু না কিছু হারিয়ে এলো। তারপর এই ঘাট খোঁজা, ওই ঘাট খোঁজা। জাল ফেলতে গিয়ে কেউ থালা, বাটি, গেলাস পেলে আবার ফেরৎ দিতে আসতো। তারপর যে বাসনগুলো ভেসে যেতো, সেগুলো নিয়েই থাকতো বেশি ভয়। কোথায় কার ঘাটে গিয়ে থামবে, আদৌ ঘাটে থামবে নাকি মাঝ পুকুরে তলিয়ে যাবে, কে জানে! কারো কারো তো কানের দুল, নাকছাবিও হারিয়ে যেতো। তারপর সারাদিন তন্নতন্ন করে জল ঘোলা করা। কেউ পেতো, কেউ তাই নিয়েই হা হুতাশে কাটাতো।”
এক নিশ্বাসে দিদি এসব কথা বলতে বলতে ফিরে গেলো ছোটবেলায়।
মালতী দিদিকে থামিয়ে দিয়ে বললো, “দিদি আমরা তো এখনো পুকুর ঘাটে বাসন মাজি, চান করি, জামাকাপড় কাচি। টাইম কলে জল আসে, ধুর! আমাদের সেসব পোষায় না। ওটাই অভ্যেস গো দিদি।”
দিদি মালতীর কথায় সায় দিয়ে বলে, “হ্যাঁ যাদের যা অভ্যেস সেটা বদলাতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ওখানেও এখনো অনেকে এমন আছে। সব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে বদলাতে পারেনি। কেউ কেউ আবার পেরেছে।”
এইসব গল্পের মধ্যেই দুজনে দুজনের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। মালতী কাজ সেরে বাড়ি চলে গেলো।
দিদির মন সারাদিন সেই হাঁড়িটার সঙ্গে ভাসতে থাকলো। এখনো চোখে ভাসছে হাঁড়িটা ঢেউয়ের দোলা খেতে খেতে দূরে চলেই যাচ্ছে।
হাঁড়ির মতো কত কী ভেসে যায়। কত বিশ্বাস, কত সময়, কত ভালোবাসা, কত আদর, কত সংসার, কত সংস্কৃতি, কত চেতনা।
Comments
Post a Comment