একই অঙ্গে এতো রূপ
“একই অংগে এত রূপ দেখিনিতো আগে; নাম সার্থক।”
আমার একটা লেখায় সাবিনাদি কমেন্ট করেছে। সেই প্রসঙ্গে আমার মাথায় এলো - এক অঙ্গে আমি এতো রূপ নিয়ে জন্মাইনি, বরং বলা ভালো “এতো জনের” রূপ নিয়ে জন্মেছি।
আমার গ্রামের তরণীদাদু আমাকে দেখতে পেলেই জয়ললিতা বলে ডেকে একগাল হেসে দিতেন। মাকে আর আমাকে একসঙ্গে দেখলে মাকে বলতেন - “দ্যাখো ছোটবউমা তোমার এই মেয়েটাকে দেখলেই আমার জয়ললিতার মুখ মনে পড়ে যায়।” মা হেসে দিতো। অতো ছোটবেলায় জয়ললিতাকে নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিলো না। বড় হয়ে যখন ভাবতাম দাদু কোন অ্যাঙ্গেল থেকে বলতেন! উত্তর পাইনি। আজ তিনিও নেই, জয়ললিতাও।
বিয়ের পরে পরেই ওড়না মাথায় দেওয়া একটা ছবি দেখে দাড়িকাকু বলেছিলো - তোকে এই ছবিটায় বাংলা দেশের প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনার মতো দেখাচ্ছে। আমার বর শুধরে দিয়ে বলেছিলো না না খালেদা জিয়ার মতো। 😀
এক দিদি বলতো - “রূপু তোমাকে ঠিক আমার ননদের মতো দেখতে, সে মোটা আর তুমি রোগা, এই যা তফাৎ।”
কদিন আগেই অরুণাভদা বললেন - “আরে আমি রাস্তায় রোজই তো কত কত রূপশ্রী দেখি। আর তুমি একজন “অনুভব” দেখেছো তাতে আশ্চর্যের কী আছে?!” আমি ভাবলাম উনিও যে অনেক রূপশ্রী দেখেন তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। 😜
কয়েকদিন আগেই আমার কলিগ শ্রীপর্ণা কলেজ ঢুকেই দেখে, আমাদের স্টাফরুমে অন্য স্কুলের একঝাঁক দিদিমণি বসে। ও নিজে ঘাবড়ে- টাবরে গিয়ে নিজেকে আগন্তুক ভেবে অবাক হয়েছিলো। সেই মুহূর্তে ওই দিদিমণিদের মধ্যে একজন কথা বলায় ওর মনে হয়েছিলো - এর মধ্যে রূপশ্রী আবার কোথা থেকে এলো? তাঁর গলা নাকি অবিকল আমার মতো!
কয়েদিন আগে জেঠুর বাড়ি গিয়েছিলাম। জেঠু আমাকে দেখেই বললো - “তোকে না ঠিক ওই ডাইনি, পেত্নি, শাঁখচুন্নিদের মতো দেখাচ্ছে। পাকামো মেরে আর রোগা হওয়ার চেষ্টা করিস না।” 😅
জাস্ট কিছুদিন আগে একটা শাড়িপরা ছবি শ্বশুরমশাইকে হোয়াটসাপে পাঠিয়ে বললাম - বাবা দেখুন তো কেমন লাগছে? তিনি উত্তর দিলেন - “একেবারে অন্যরকম!”
ছোটবেলায় নিজের নাম নিয়ে খুশি ছিলাম না। মনে হতো বাবা কেন এমন নাম দিলো? সবাই ব্যঙ্গ করবে। দাদাকে অনেকবার জ্বালিয়েছি। বলেছি চেঞ্জ করে দাও। এখন আর অখুশি নই। আমি অনেকের রূপ নিয়েই শ্রী। নিজের নামকেও ভালোবেসে ফেলেছি।
Comments
Post a Comment